চিকিৎসা

মাথা ব্যাথার কারণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার । Causes of headache and it’s solutions

আমরা প্রায় সকলেই দৈনন্দিন জীবনে যেসব শারীরিক সমস্যায় ভুগি তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ও কমন সমস্যা হলো মাথা ব্যথা। যা মৃদু থেকে শুরু করে তীব্র মানেরও হতে পারে। এর ফলে অনেক সময়েই আমাদের কাজকর্মের ক্ষতি হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

• মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার:-
(১) ঘুমের কারণে মাথা ব্যাথা ও তার প্রতিকার:-
° বেশি ঘুমের কারণে~ অনেক সময়েই দেখা যায় সারা সপ্তাহ বিশাল কাজের চাপে থেকেও কোনোরুপ মাথা ব্যাথা হয়না, কিন্তু ছুটির দিন লম্বা ঘুম দিয়ে ওঠার পর হঠাৎ মাথাব্যাথা। এর কারণ হলো, হঠাৎ করে মানসিক চাপ কমে যাওয়ায় মাথায় একপ্রকার হরমোনের কমতি। যদিও এই ধরনের মাথা ব্যথায় চিন্তার কোন কারণ নেই।

এই ধরনের মাথা ব্যাথার হাত থেকে বাঁচতে একটিই উপায় অবলম্বন করা যায়। প্রতিদিন ঘুমের সময়কে নির্দিষ্ট করা। অর্থাৎ ছুটির দিনে বেশি না ঘুমিয়ে বাকি দিনগুলি মতই নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো।

° কম ঘুমের কারণে~ ঘুম কম হলে মাথা ব্যাথা হয়। ঘুম কম হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। অতি অল্পতেই তখন মাথা ব্যাথা অনুভব হয়। ঘুম কম হলে এই ব্যথা বারবার তীব্র হলে দেখা দিতে পারে।

এই ধরনের মাথা ব্যথার হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল পর্যাপ্ত সময় ঘুমানো।

(২) নির্দিষ্ট কিছু খাবারের থেকে মাথা ব্যথা:- চা, কফি, কোমল পানীয় খুব বেশি মাত্রায় খেলে মাথা ব্যথা হয়। কারণ এই ধরনের খাবারে থাকে ক্যাফিন। যার থেকে মাথা ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।

এই ধরনের মাথা ব্যথা কমবে এসব নির্দিষ্ট খাওয়ার স্বল্প মাত্রায় খেলে।

(৩) জলের ঘাটতির কারণে মাথা ব্যথা:- যতটুকু জল পান করা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জল শরীর থেকে বের হয়ে গেলে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। বমি, ডাইরিয়া, অতিরিক্ত ঘাম, স্বল্প পরিমাণ জল পান করা এসব কারণে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায় এবং তার থেকে মাথা ব্যাথা সৃষ্টি হতে পারে।

দিনে অন্তত ২ লিটার জল পান করলে শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ হবে এবং মাথা ব্যথা দূর হবে। মাথা ব্যথা শুরু হলেও কিছুক্ষণ পরপর জল খেলে অনেক সময়েই মাথা ব্যথা কমে যায়।

(৪) কম খাওয়া বা কোনো বেলার বেলার খাবার না খাওয়ার কারণে মাথা ব্যথা:- খাওয়া-দাওয়া অনিয়ম করলে বা কোনো বেলা খাবার না খেলে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। কারণ আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, তা থেকে এক প্রকারের সুগার তৈরি হয়, যেটি আমাদের ব্রেনের খাদ্য। নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ না করলে রক্তে সেই সুগারের পরিমাণ কমে গিয়ে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।
এই ধরনের মাথা ব্যথা হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করা এবং মাথা ব্যথা দেখা দিলে খালি পেটে না থেকে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ার খেয়ে নাওয়া।

(৫) সারাদিন শুয়ে বসে থাকা বা শারীরিক পরিশ্রম কম হওয়ার কারণে মাথা ব্যথা:- সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে বা শারীরিক পরিশ্রম প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।
এই ধরনের মাথা ব্যথা কবল থেকে বাঁচার উপায় হলো নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিশ্রম করা।

(৬) মানসিক চাপের কারণে মাথা ব্যথা:- এই প্রকারের মাথা ব্যথা টি খুবই কমন একটি মাথা ব্যথা। বর্তমান যুগে আমরা প্রত্যেকেই প্রায় কিছু না কিছু মানসিক চাপে থাকি, যার ফলে মাথা ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।

এই ধরনের মাথা ব্যথায় হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো যে সমস্যার কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে সেই সমস্যাটিকে সমাধান করা।

• মাথা ব্যথার প্রকার:-
(১) টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা:- এই ধরনের মাথা ব্যথা খুব কমন একটি মাথা ব্যথা। প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৭৮ জনই এই মাথা ব্যথায় ভোগেন। যদিও এর নামের মধ্যে “টেনশন” শব্দটি আছে। তবুও টেনশন ছাড়াও আরো অন্যান্য কারণে এই মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এই প্রকারের মাথা ব্যথা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের হয়। খুব একটা তীব্র মাথা ব্যথা হয় না। দিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে নিয়ে যেতে খুব একটা অস্বস্তি হয় না। এই ধরনের মাথা ব্যথায় সাথে বমি ভাব বা বমি দেখা যায় না, আলো বা আওয়াজে কোনো রকম অস্বস্তি হয় না, হাঁটাচলা করলে মাথা ব্যথা বাড়ে না। এই ধরনের মাথা ব্যথা সাধারণত মাথার দু’পাশে হয়। মাথায় খুব চাপ ধরে বা টুপির মতো টাইট হয়ে বসে থাকে, আবার অনেক সময় মনে হয় মাথার ওপর একটি ভারী ওজন রয়েছে। এই ধরনের মাথা ব্যথা মাথার বাইরে থেকে আসছে বলে মনে হয়। সাধারণত মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে বা ঘাড়ের দিকে এই মাথা ব্যথা হয়।

(২) মাইগ্রেন জাতীয় মাথা ব্যথা:- এই ধরনের মাথা ব্যথা খুব তীব্র প্রকারের হয়। এই মাথা ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে দিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করা অস্বস্তিজনক হয়ে ওঠে। এই ধরনের মাথা ব্যথায় সাথে বমি ভাব বা বমি দেখা যায় , আলো বা আওয়াজে কোনো রকম অস্বস্তি হয় , হাঁটাচলা করলে মাথা ব্যথা বাড়ে। এই ধরনের মাথা ব্যথা সাধারণত মাথার যে কোনো একপাশে হয়। মাথাটি টনটন করতে থাকে, যেন মনে হয় একটি রক্তনালি সংকচিত ও প্রসারিত হচ্ছে।

• প্রতিকার:-
এই দুই ধরনের মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে ১০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল কার্যকরী। অর্থাৎ ৫০০ মিলিগ্রামের দুটি প্যারাসিটামল ৪-৬ ঘণ্টার ব্যবধানে খেতে হবে। মাথা ব্যথা চলে গেলে আর এই ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। তবে দিনে ৮ টি ট্যাবলেট এর বেশি খাওয়া উচিত নয়। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, এই হিসেবটি একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য, যার অন্য কোনো রোগ নেই এবং শরীরের ওজন ৫০ কেজির বেশি। তবে মাইগ্রেনের ব্যথায় কখনো কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

• কি কি ধরনের মাথাব্যাথা হলে বুঝবেন যে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন?
(১) ঘন ঘন মাথা ব্যথা হলে এবং মাথা ব্যথা তীব্র হলে,
(২) ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়েও মাথা ব্যথা না কমলে এবং ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে,
(৩) সামনের দিকে কিংবা কোন একপাশে তীব্র টনটনে ব্যথা হলে,
(৪) মাথা ব্যথার সাথে বমি ভাব বা বমি দেখা দিলে, এবং আলো ও শব্দ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠলে,
(৫) বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে এবং নতুন করে মাথা ব্যথা দেখা দিলে,
(৬) সাধারণভাবে যে প্রকারের মাথা ব্যথা হয় তার ধরন বদলে গেলে।

• মাথা ব্যথার কি কি লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন?
(১) হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হলে এবং শুরুতে ব্যথার তীব্রতা মারাত্মক থাকলে, অথবা এতটাই তীব্র মাথা ব্যথা যদি হয় যা আগে কখনো হয়নি যেসব লক্ষণ দেখা দিলে খুব দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন কারণ এগুলি ব্রেনে রক্তক্ষরণের লক্ষণ।
(২) কোনো দুর্ঘটনা বা কোথাও পড়ে যাওয়ার ফলে মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে।
(৩) প্রচন্ড মাথাব্যাথার সাথে যদি কথা বলতে না কিছু মনে করতে অসুবিধা হয়, হাত-পা দুর্বল বা অবশ হয়ে আসলে তা স্ট্রোকের লক্ষণ।
(৪) মাথাব্যাথার সাথে যদি ঝিমিয়ে পড়া, অসংলগ্ন আচরণ, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, ঘাড় শক্ত হওয়া, চামড়ায় রাশ ওঠা এই লক্ষণগুলি থাকে তবে তা হতে পারে ব্রেনে ইনফেকশনের লক্ষণ।
(৫) মাথাব্যাথার সাথে খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ব্রেনে রক্তক্ষরণের লক্ষণ।
(৬) মাথাব্যাথার সাথে চোখে কম বা অস্পষ্ট দেখা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
(৭) প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে খাওয়ার সময় চোয়ালে ব্যথা, চোখে ঝাপসা বা একটার জায়গায় দুটো দেখলে, মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে তা হতে পারে মাথা ও ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের লক্ষণ

এরকম খবর সবার আগে পেতে ডানদিকের নীচে থাকা টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button