গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও তার সমাধান । Gastric problem and its solutions
আগের পোস্টে আমরা আলোচলা করেছিলাম মাথা ব্যথার কারণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে। নীচে সেই পোস্টের লিঙ্ক দেওয়া রইলো, আপনি না পড়ে থাকলে সেই লিঙ্কে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন। আজ আমরা কথা বলবো আরও একটি খুবই পরিচিত শারীরিক সমস্যা নিয়ে। আর তা হলো গ্যাস্ট্রিক।
আমাদের অনেকেরই খাওয়ার পর বুক জ্বালাপোড়া করে। এই রোগটিই সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর কারণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা।
• গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ কি?
বুক জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি মুখে টক টক লাগা, পেট ফাঁপা লাগা, বমি বমি ভাব হওয়া, বারবার ঢেকুর ওঠা, কারো কারো ক্ষেত্রে বারবার কাশি হওয়া বা হেঁচকি ওঠা, গলা কর্কশ হয়ে যাওয়া, শ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ আসা এইসবগুলি হলো গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ।
• গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণ:- আমরা যখন কোনো খাদ্য গ্রহণ করি তখন সেই খাওয়ার সর্বপ্রথম পাকস্থলীতে যায়, পাকস্থলী কিছু অ্যাসিড সহ আরও কিছু জিনিস তৈরি করে খাওয়ার হজম করার জন্য। অ্যাসিড ও খাবার উভয়েই পাকস্থলী থেকে নীচের দিকে নামতে থাকে। যখনই এই অ্যাসিড নীচের দিকে না নেমে ওপরের দিকে অর্থাৎ গলার দিকে উঠে আসে তখনই বুকে জ্বালাপোড়া সহ আরও অন্যান্য অসুবিধা অনুভব করি। এভাবেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
পাকস্থলী থেকে অ্যাসিডের এই ওপরের দিকে উঠে আসার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন:-
(১) বিশেষ কিছু কিছু খাবার, যেমন, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার, কফি, কিংবা একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম খাবার এই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বা বাড়িয়ে দিতে পারে।
(২) অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে অনেকসময় এই সমস্যা দেখা দেয়।
(৩) অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা টেনশন থেকে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
(৪) ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলেও এই সমস্যা বেশি হতে পারে।
(৫) গর্ভবতী মহিলারা প্রায়ই এই সমস্যায় ভোগেন।
(৬) হাইটেস হার্নিয়া নামক রোগ ( এই রোগের ক্ষেত্রে পাকস্থলীর কিছু অংশ বুকের উপর চলে আসে) থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
(৭) অ্যাসপিরিন জাতীয় আরো কিছু ওষুধ এই সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
• গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার:-
(১) একবারে পেট ভরে খেলে এই সমস্যাটি বেশি হয়, তাই একবারে বেশি না খেয়ে একাধিকবার অল্প করে খেলে এই সমস্যা কমে যায়।
(২) নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না খেয়ে, খাওয়ার অনিয়ম করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই খাওয়া দাওয়া অনিয়মিত না করে নিয়মিতভাবে খাদ্য গ্রহণ করলে এই সমস্যা কম হয়।
(৩) একেকজনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের খাওয়ার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা বুকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। তাই নির্দিষ্ট কোন খাবারটির জন্য বুকে জ্বালাপোড়া হচ্ছে সেটি চিহ্নিত করে সেই খাবার গ্রহণ কমালে এই সমস্যা সমাধান হতে পারে।
(৪) রাতের খাবার অর্থাৎ ডিনার ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩ ঘন্টা আগে সেরে ফেললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়। তবে এক্ষেত্রে এত আগে খাদ্য গ্রহণ করার জন্য ঘুমানোর আগে খিদে পেয়ে যেতে পারে কিন্তু সেটি কে কন্ট্রোল করতে হবে অর্থাৎ আর কোন রকম খাবার খাওয়া যাবেনা।
(৫) রাতে শোয়ার সময় মাথা ও বুক কোমরের চেয়ে ১০-২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখতে হবে। এর ফলে পাকস্থলির অ্যাসিড উপরে উঠতে পারবে না। এভাবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান হবে।
(৬) অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত ওজন গ্যাসের সহ আরও অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে ফেললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়।
(৭) ধূমপান কমিয়ে ফেলতে হবে বা বন্ধ করে দিতে হবে। ধূমপান বর্জন করলে বা কমিয়ে ফেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।
• গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন?
যদি বারবার এই সমস্যা দেখা দেয় এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিনই ঘন ঘন এই সমস্যা দেখা দেয়, বয়স ৫৫ বছর বা তার বেশি হয়ে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
• গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার অ্যালার্ম সিম্পটম কি, যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন?
(১) ওজন অস্বাভাবিক ভাবে কোনো কারণ ছাড়াই কমে যাওয়া,
(২) খাওয়ার গিলতে সমস্যা হওয়া বা গলায় আটকে যাওয়া,
(৩) বারবার বমি হওয়া,
(৪) বমি বা পায়খানার সাথে রক্তক্ষরণ,
(৫) পেটে চাকার মতো কিছু অনুভব হওয়া,
(৬) আয়রনের অভাব জনিত রক্তশূন্যতা,
(৭) পেটে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা শুরু হওয়া।
• মাথা ব্যাথার কারণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার:- Link
এরকম খবর সবার আগে পেতে ডানদিকের নীচে থাকা টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন।