জানা অজানা

রাখী পূর্ণিমায় রাখীবন্ধন উৎসব শুরু হলো কিভাবে | ইতিহাস vs পুরাণ

 
ফিনিক্স বাংলায় সকলকে স্বাগত। আজ রাখী পূর্ণিমা, এই দিন রাখী বন্ধন উৎসব পালিত হয়। এদিন ভাই বা দাদাদের মঙ্গল কামনায় বোন বা দিদিরা তাদের হাতে বেঁধে দেন রাখী এবং এর বদলে দাদা বা ভাইয়েরা তাদের বোন বা দিদিকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয় বলে একে শ্রাবণী পূর্ণিমা অথবা সৌভাগ্য পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। সাধারণত হিন্দু, জৈন, শিখরা এই উৎসব পালন করেন। রাখী পূর্ণিমা সম্পর্কে ইতিহাস এবং পুরাণে নানান রকমের ঘটনার কথা জানা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
 
° রাখী বন্ধন উৎসবের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা হলো:- 
 
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য হিন্দু- মুসলিম দের ঐক্য বা একতার প্রতীক হিসেবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেন। তিনি ঢাকা ও সিলেট থেকে মুসলিম ভাই- বোনদের কলকাতায় আহ্বান করেন। এবং রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেন। ভারতের ইতিহাসে চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সময় এই রাখী বন্ধন হিন্দু- মুসলিম দের মধ্যে একতা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে যা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।
 
• গুজরাটের সুলতান যখন চিতোর আক্রমণ করতে আসেন তখন সেখানকার বিধবা রাণী কণ্যাবতী মোগল বাদশা হুমায়নকে রাখী পড়িয়ে সাহায্যের অনুরোধ জানান। যদিও মোগল সম্রাট ঠিক সময় সৈন্য পাঠাতে না পারায় রাণী পরাজিত হোন। 
 
 
° এবার জেনে নেওয়া যাক, রাখী বন্ধন উৎসব সম্পর্কে পুরাণে কি কি কথিত আছে:-
 
•  মহাভারত অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের নিজের বোন ছিলেন সুভদ্রা। কিন্তু তিনি দ্রৌপদীকেও নিজের বোনের মতো স্নেহ করতেন। একবার শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে যায় এবং সেখান থেকে রক্তপাত শুরু হয়। তখন সেখানে সুভদ্রা এবং দ্রৌপদী দুজনেই উপস্থিত ছিলেন। সুভদ্রা তখন সেই রক্ত বন্ধ করবার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন। কিন্তু দ্রৌপদী একটুও দেরী না করে নিজের পরিহিত মূল্যবান রেশমী শাড়ি ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের সেই কেটে যাওয়া স্থানটি বেঁধে দেন তাড়াতাড়ি রক্তপাত বন্ধ করার জন্য। এবং শ্রীকৃষ্ণ তখন দ্রৌপদীকে বলেন, তার বেঁধে দেওয়া কাপড়ের প্রতিটি সুতোর প্রতিদান দেবেন তিনি। এরপর শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজসভায় বস্ত্রহরণের চরম কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা করেন। এই রাখী বন্ধন উৎসবের ৫ দিন আগে ঝুলনযাত্রা এবং ৭ দিন পরে জন্মাষ্টমী পালিত হয়। 
 
 
• ভাগবত পুরাণ এবং বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী, বিষ্ণু দৈত্যরাজ বলি কে হারালেও বলি তাদেরকে তার নিজের প্রাসাদে থাকতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু এই নতুন গৃহ দেবী লক্ষ্মীর পছন্দ হয়নি। তিনি তখন বলিরাজকে ভাই পাতিয়ে একটি রাখী পড়ান। দৈত্যরাজ খুশি হয়ে বোনের অর্থাৎ দেবী লক্ষ্মীর মনের ইচ্ছা জানতে চাইলেন। লক্ষ্মী তখন বলিরাজকে বলেন তিনি যেনো তাদেরকে নিজগৃহে ফিরতে দেন। এবং বলি সেই ইচ্ছে পূরণ করেছিলেন।
 
• ভবিষ্যৎ পুরাণ অনুযায়ী, দৈত্যরাজ বলির উপদ্রপে দেবরাজ ইন্দ্র যখন নাজেহাল দেবগুরু বৃহস্পতির উপদেশে দেবরাজ ইন্দ্র এই রাখী পূর্ণিমা বা শ্রাবণী পূর্ণিমার দিনে দৈত্যরাজ বলির সাথে লড়াই করতে যান। তখন ভগবান বিষ্ণুর কথামতো দেবরাজ ইন্দ্রের পত্নী সূচী তার হাতে বিশেষ মন্ত্রপূত রাখী বেঁধে দেন। এবং এরপর এই যুদ্ধে দেবরাজ ইন্দ্র জয় লাভ করেন। যদিও এখানে ভাইবোনের কোনো ব্যাপার নেই।
 
 

   হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ লিঙ্ক ঃ- Whatsapp

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button