আম তো খাচ্ছেন, কিন্তু কিভাবে চিনবেন কোনটা কি আম । How to understand the varieties of mango
গ্রীষ্ম মানেই নানা রকম ফলের বাহার, ঠিক তেমনি ফলের রাজা আম এর মরশুম হলো এই গ্রীষ্ম। ঝুমকো, ফজলি, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংরা, নানানরকমের আম। আম শুধু বাঙালির নয় পৃথিবীর সকল মানুষের ভীষন প্রিয়, কিন্তু কি আম খাচ্ছেন আপনি সেটা বুঝবেন কিভাবে (varieties of mango), এর উত্তর আমের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আমরা যেমন বাহ্যিকভাবে কিছু দেখে সেটা বিচার করতে পারি, ঠিক তেমনি আমরা যদি বিভিন্ন ধরনের আমের স্বাদ কিংবা আকার-আকৃতি, আমের গঠন এবং মিষ্টতা, গন্ধ এই বৈশিষ্ট্য গুলি খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে বিভিন্ন আমগুলির মধ্যে নানান পার্থক্য বুঝতে পারবো এবং কোনটি কি আম তা চিনে নিতে পারবো।
পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় আর কোনো ফল নেই আমের বিকল্প রূপে। এমন কোনো জাতি নেই যারা আম পছন্দ করেন না এবং এই ফল যদি আপনি অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে নেন তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। আর সে কারণেই আমকে বলা হয় ফলের রাজা।
জানা যায় কোন এক সময় সম্রাট আলেকজান্ডার আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ এ প্রথম এই ফলটির সন্ধান পান এবং তিনি তা দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। বিজ্ঞানীরা বলেন এই আমের উৎপত্তি আমাদের ভারতবর্ষে এবং তারপরে তা বিভিন্ন দেশ-বিদেশে ছরিয়ে পরে। বিজ্ঞানীরা এর বিজ্ঞানসম্মত নাম রেখেছেন ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা।
চিন পর্যটক হিউয়েন সাং প্রথম বাংলাদেশের আমকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করান। তারপর বিভিন্ন দেশ এই আম চাষ করতে শুরু করে। আর এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩৫ টি প্রজাতির আম এবং ৩০০ জাতের আম রয়েছে। এবারে আসুন দেখে নিই কোন আমের কি বৈশিষ্ট্য বা কীভাবে আম চিনব :-
১। গোলাপখাস: এই আমটি গন্ধে বড়ো মাতোয়ারা করে তোলে।এবং এর বর্ণ অনেকটা লাল লাল টাইপের। একদম গোলাপ ফুলের মতো গন্ধ এবং লাল আভাটাও গোলাপের মতো তাই এর নাম গোলাপখাস।
২। হিমসাগর: এই আমটি খেতে অসাধারণ মিষ্টি, আর সে কারণেই এটি অত্যাধিক জনপ্রিয়। এই আম সিজনের শুরুর দিকে পাওয়া যায়।
৩। ল্যাংরা: এই আমের নামের সাথে আমটির ও আমগাছটির যথেষ্ট মিল রয়েছে। গাছটি অনেকটা ব্যাঁকা হয় এবং ফলটির আকৃতি উপরের দিকটা মোটা আর নিচের দিকে সরু। তাই এর নাম ল্যাংরা। আবার বলা হয়ে থাকে, এক ল্যাংরা ফকির প্রথম এই আম চাষ করে ছিলেন। যেহেতু তিনি ল্যাংরা ছিলেন তাই এর নাম ল্যাংরা হয়েছে। এর গায়ের রং হলুদ হয় এবং এটি জুলাই মাসে পাওয়া যায়।
৪। গোপালভোগ: বাংলাদেশের গোপাল নামক এক ব্যাক্তি প্রথম এই আমের চাষাবাদ করে, তাই তার নামানুসারে এর নাম হয়েছে গোপালভোগ। এই আমের গায়ে ছোট ছোট হলুদ রং এর গোল গোল দাগ থাকে। এই আম বাজারে ওঠে মে মাসে।
৫। আম্রপালি: এই আমগাছটি আকারে ছোটো হয় এবং প্রচুর ফল হয়। দশহরি ও নিলাম এই দুই প্রজাতির আমের জাত মিশিয়ে আম্রপালি আমটি তৈরি করা হয়। এই আম খেতেও যেমন মিষ্টি তেমন অন্য আমের থেকে এর স্বাদও আলাদা ।
৬। লক্ষনভোগ: এই আম খেতে তেমন মিষ্টি না , সেকারনেই এই আম ডায়াবেটিস রুগীদের দেওয়া হয়।
৭। আশ্বিনা আম: এই আম কাঁচাতে ভীষণ টক এবং পাকলে খুলে মিষ্টি হয়। এটি আগষ্ট মাসে পাওয়া যায়।
৮। সিন্দুরি: এই আম সিঁদুরের মতো লাল হয় বলে এর নাম সিন্দুরি। এই আমটি আকারে ছোট এবং সুগন্ধিযুক্ত হয় ।
৯। চৌসা: এই আমটির নামকরণ করেন শের সাহ । সমগ্র ভারতেই এটি জনপ্রিয়।
১০। ফজলি: ফজলি বিবি নামে এক বৃদ্ধা বাস করতেন । তাঁর উঠোনে ছিল একটি আম গাছ। সেই বৃদ্ধা এক ইংরেজ সাহেবকে তার আম খেতে দেয়, আম খেয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় সেই সাহেব এবং ইংরেজিতে সে আমের নাম জানতে চান নেম শুনেই না বুঝে নিজের নাম বলে দেন ফজলি বিবি। সেই থেকেই এই আমের নাম ফজলি। পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে পাওয়া এই আম ।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে। যেমন – সুবর্ণরেখা, মল্লিকা,তোতাপরি, সূর্যপূরি, নিলাম্বরি, মধুচুসকি, মোহনভোগ, কাঁচামিঠা ,অরুনা, কালিভোগী।
এই ছিলো আম নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা। আবারও আপনাদের মন পছন্দের কোনো একটি টপিক নিয়ে শিঘ্রই আসছি। এরকম আরও তথ্য সবার আগে পেতে ডানদিকের নীচে থাকা টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন।