রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হেরে স্বপ্নভঙ্গ কলকাতার, প্রথমবার লড়েই প্লে অফ পর্যায়ে লক্ষ্ণৌ | LSG beat KKR in a nail biting match at IPL
আইপিএলের গ্রুপ পর্বের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ শেষ ম্যাচে লড়াই করেও মাত্র ২ রানে হেরে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) এবং তার সাথেই এই ম্যাচ জিতে পয়েন্টস টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করলো লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস (LSG)। প্লেঅফে কোয়ালিফাই করার জন্য কলকাতাকে এই ম্যাচ জিততেই হতো, যদিও তাতেও প্লে অফে জায়গা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না। সেক্ষেত্রে গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলির ওপরে নজর রাখতে হতো। যদিও কেকেআরের এই শেষ আশায় জল ঢেলে দিয়ে এবছর প্রথমবার আইপিএলে লড়েই প্লে অফে উন্নীত হলো কে এল রাহুলের নেতৃত্বাধীন লক্ষ্ণৌ।
এদিন ম্যাচের শুরুটা মোটেও ভালো করেনি KKR। টসে জিতে মুম্বাইয়ের ডিওয়াই প্যাটেল স্টেডিয়ামে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় LSG। প্রথম সাত ওভার মোটামুটি ঠিকগতিতে ব্যাটিং করলেও তারপরেই অ্যাক্সেলারেটর চাপে লক্ষ্ণৌ। কে এল রাহুল এবং কুইন্টন ডি ককের মারমুখী প্রহারে গোটা কেকেআর বোলিং ছন্নছাড়া হয়ে যায়। দুজনেই ইনিংসের শেষ অবধি অপরাজিত থেকে KKR এর সামনে ২১০ রানের পাহাড়প্রমান টার্গেট খাঁড়া করে। বিদ্যুৎগতির ব্যাটিং করে এই ম্যাচে শতরান করেছেন কুইন্টন ডি কক (৭০ বলে ১৪০*) ও কে এল রাহুলও ৫১ বলে ৬৮ রান করে ধারাবাহিকতার (Consistency) প্রমান দিয়েছেন। টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে তিনিই বর্তমানে ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এদিন KKR এর বোলারদের মধ্যে সবথেকে বেশি মার খেয়েছেন টিম সাউথি (৪ ওভারে 57, ইকোনমি ১৪.২৫) ও আন্দ্রে রাসেল (৩ ওভারে ৪৫, ইকোনমি ১৫.০০)। খারাপ বোলিং করেছেন বরুন চক্রবর্তী ও উমেশ যাদবও । ইকোনমিক্যালি ভালো বোলিং করলেও উইকেট নিতে ব্যর্থ সুনীল নারিনও। ফিল্ডিংয়েও শোচনীয় অবস্থা কেকেআরের। তৃতীয় ওভারে উমেশ যাদবের বলে কুইন্টন ডি ককের সহজ ক্যাচ ছাড়েন বরুন চক্রবর্তী, সময়টা সত্যিই ভালো যাচ্ছে না গতবছরের আইপিএল কাঁপানো মিস্ট্রি স্পিনারের। তার ওপরে কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরি সহ ১৪০ রান যেন আঁতে ঘা দেওয়ার মতো।
এতো রান তাড়া করার আগেই বহু KKR ফ্যান ম্যাচ হারার আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এদিন বোলিং খারাপ হলেও ব্যাট হাতে সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে KKR। শুরুতেই ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও এই ম্যাচেই প্রথম কেকেআরের হয়ে খেলতে নামা অভিষেক তোমারের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নাইট শিবির। সেখান থেকে ঝোড়ো ব্যাটিং করে কলকাতাকে এগিয়ে নিয়ে যান নীতিশ রানা (২২ বলে ৪২ রান )। ক্যাপ্টেন শ্রেয়স আইয়ারও এই ম্যাচে ফের ২৯ বলে ৫০ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন নাইটদের উইকেটরক্ষক স্যাম বিলিংসও (২৪ বলে ৩৬ রান )। তবে ফের ব্যর্থ হয়েছেন KKR এর সেরা ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল। ২০১৯ এর পর থেকে সেইভাবে ধারাবাহিক ভাবে ঝোড়ো ইনিংস সমর্থকদের উপহার দিতে পারেননি কেকেআরের চোখের মনি। তবে শেষদিকে রিঙ্কু সিং ও সুনীল নারিনের বিদ্যুৎগতির ব্যাটিং KKR কে একেবারের জয়ের দারগোড়ায় নিয়ে গিয়েছিলো। শেষ ওভারে জিততে গেলে KKR কে দরকার ছিল ৬ বলে ৩১ রান। প্রথম তিনটি বলে পরপর ৪,৬,৬ মেরে ম্যাচ একেবারের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলো রিঙ্কু সিং । কিন্তু পরের বলে ২ রান নেওয়ার পরে পঞ্চম বলে স্টোনিসের বলে ক্যাচ আউট হন রিঙ্কু। কেভিন লুইস একহাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে লক্ষ্ণৌকে ম্যাচে ফেরান। শেষ বলে তিন রান লাগলেও স্টোনিসের ধারালো বলে বোল্ড আউট হন উমেশ যাদব। আর সেই সাথেই আরও দু পয়েন্ট নিয়ে মোট ১৮ পয়েন্ট পৌঁছে লিগ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে শেষ করলো LSG।
যদিও ম্যাচ হারলেও সমর্থকদের সকলের মন জিতে নিয়েছেন রিঙ্কু সিং। তার ১৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস প্রতিটি KKR সমর্থকদের মনিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। হারের ফলে এবছরের আইপিএল থেকে বিদায় নিলো কলকাতা। দুবারের চ্যাম্পিয়নরা শেষ ট্রফি জিতেছিল ২০১৪ সালে, এরকমই একটি ঐতিহাসিক ম্যাচে পাঞ্জাবকে হারিয়ে ; কিন্তু তারপরে নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে কিন্তু দীর্ঘ আট বছর ধরে ট্রফি জয় যেন স্বপ্নই থেকে গিয়েছে নাইট বাহিনীর।
ম্যাচ শেষের গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার বিজেতারা –
★ ম্যান অফ দ্য ম্যাচ – কুইন্টন ডি কক (৭০ বলে ১৪০ রান )
★ ফাস্টেস্ট ডেলিভারি অফ দ্য ম্যাচ – মহসিন খান (১৫১কিমি /ঘন্টা)
★ গেমচেঞ্জার অফ দ্য ম্যাচ – কুইন্টন ডি কক
★ সুপার স্ট্রাইকার অফ দ্য ম্যাচ – রিঙ্কু সিং (১৫ বলে ৪৫ রান, স্ট্রাইক রেট ২৬৬.৬৭)
ম্যাচের স্কোর –
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস – ২১০- ০ ( ২০ ওভার )
কলকাতা নাইট রাইডার্স – ২০৮-৮ ( ২০ ওভার )
- লক্ষ্ণৌ দুই রানে জয়ী।
এইরকম খেলা সম্পর্কিত আরও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং নীচের ডানদিকের আইকনে ক্লিক করে আজই যুক্ত হোন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।