রাজ্য

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ট্রোলিং, অবসাদে আত্মঘাতী মালদার উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া । Suicide of Unsuccessful HS Candidate

বিগত কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হট টপিক অনুত্তীর্ন উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের ব্যঙ্গ করা। তাদের নিয়ে নানান হাস্যরসিক ভিডিও, মিমস (Meme) এ ছেয়ে গিয়েছে ফেসবুক। এরই মধ্যে গতকাল মালদার এক অনুত্তীর্ন পড়ুয়ার আত্মহত্যার খবর পাওয়া গিয়েছে। উক্ত ছাত্রীর নাম শম্পা হালদার (১৮), বাড়ি মালদার হবিবপুরে। আপাতত পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ না করার দরুণ মানসিক অবসাদকেই আত্মহত্যার প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচনা করছে।

শম্পা মালদার হবিবপুর আর এন রায় গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী। গত ১০ ই জুন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পরে সে দেখতে পায় যে বাকি সব বিষয়ে পাশ করলেও ইংরেজিতে ফেল করেছে। সে শুধু একা নয়, একই স্কুলের আরও অনেক পড়ুয়ারও এই একই বিষয় ইংরেজিতে ফেল করার দরুণ HS পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। তারপরেই সকল অনুত্তীর্ন ছাত্রী আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেয়। প্রথমে ডিআই অফিস, এসআই অফিসে ও তারপরে বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধের পথে হাঁটেন ফেল করা ছাত্রীরা আর এই আন্দোলনে একেবারে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় শম্পাকে। কিন্তু গত এক সপ্তাহের অপরিসীম ট্রোলিং, অসংখ্য মিমসই যেন কেড়ে নিলো এই অষ্টাদশী মেয়েটির প্রাণ।

এ মৃত্যুর দায় কার? এপ্রসঙ্গে বহু খ্যাতনামা মনোবিদরা সোশ্যাল মিডিয়াকেই দায়ী করেছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যন্ত টক্সিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো কিছু নিয়েই যেন হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি করা প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরফলে যে বহু সাধারণ মানুষের মনে তার নেগেটিভ প্রভাব পড়ছে তা অধিকাংশ মিম পেজ অ্যাডমিন ও জনপ্রিয় ইউটিউবাররা বুঝতে পারছেন না কিংবা বুঝেও বুঝতে চাইছেন না। তাই তো পয়সা কামানোর ধান্দায় এই সদ্য আঠেরোয় পা দেওয়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে খিল্লি করা ভিডিও বানাতে তাদের রুচিতে বাঁধে না এবং সেইসব ‘Amrela’ বা ‘মানছি না, মানবো না ‘ বিষয়ক ভিডিওতে হাহা রিএক্ট দিতে ও শেয়ার করতেও আমাদের কোনোরকম যায় আসে না।

কিন্ত এর ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে সকলেই যেন অজ্ঞাত। তাইতো ছাত্রীটির মৃত্যুর পরে গতকাল থেকে আবার মেয়েটির সাপেক্ষে বড়ো বড়ো আর্টিকেল লিখে অনেক তথাকথিত সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা আবার নিজেদের পালে হাওয়া ঘোরাতে চাইছে এবং এই এক পক্ষ অপর পক্ষের দড়ি টানাটানিতে আমরাও যেন বিভক্ত হয়ে পড়েছি এবং না বুঝেই তাদের অন্ধের মতো সাপোর্ট করে চলেছি। আর এই অপমান লাঞ্চনা বঞ্চনার শিকার হয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে অষ্টাদশী শম্পা যেন সোশ্যাল মিডিয়ার এই কুরুচিকর দিকটিকেই ফের সকলের সামনে জ্বলজ্বল করে তুলে ধরলো।

কিন্ত সত্যিই এই সমাজের পরিবর্তন হবে কী? এর আগেও একাধিকবার ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যমগুলোর খারাপ দিকগুলো নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, একাধিক টিভি ডিবেটও হয়েছে কিন্ত কিছুদিন পরেই তা নৈব নৈব চ! তাই কয়েকদিন পরে ফের হয়তো আমরা সকলেই এই ছাত্রীটির মৃত্যুর ঘটনাটি ভুলে যাবো , শুধু ভুলতে পারবে না শম্পার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবীরা। এবিষয়ে বাংলার সেই বিখ্যাত প্রবাদবাক্যটি মনে পড়ছে, যার যায় সেইই বোঝে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button