প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি হারাতে চলেছেন প্রায় ১৭,০০০ শিক্ষক । Termination of 17,000 Primary Teachers in WB
প্রাইমারি ও এসএসসি সংক্রান্ত নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য ও হাইকোর্টের আইনি টানাপোড়েনের মধ্যেই এবার সব থেকে বড়ো খবর হলো প্রায় ১৭,০০০ কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষক চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পারেন। সম্প্রতি হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ২৬৯ জনের প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। চাকরি হারানো শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। এই ২৬৯ জনের জেলাভিত্তিক তালিকাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং তাদের নিয়ে ব্যাপক হাসিঠাট্টাও শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও রাজ্য এই নির্দেশের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছে। বিচারপতি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার কী রায় দেওয়া হয় সেটাই এখন আলোচ্য বিষয়। আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (Termination of 17,000 Primary Teachers in WB)।
এছাড়া বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন যে, এবার থেকে সিবিআই অফিসারদের নিয়ে সিট (SIT) গঠন করে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত করা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সিবিআই ও পর্ষদের রিপোর্ট দেখে এটা স্পষ্ট যে বেছে বেছে প্রাইমারিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কখনওবা টেট পরীক্ষায় পাশ না করেই চাকরি আবার কখনও মেধাতালিকায় পেছনে থাকা প্রার্থীদের চাকরি। ফলে এতো বছর ধরে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি না দেওয়ায় স্বভাবতই বিচারপতি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি স্বয়ং এক পর্ষদের কর্মকর্তার আত্মীয়ের বেনিয়মে চাকরি পাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় জাস্টিস গাঙ্গুলী তাকে আগাম ফলাফলের জন্য তৈরী থাকতে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। বিচারপতির এই রৌদ্র মূর্তিই এখন রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবকযুবতীদের একমাত্র আশার স্থল।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং টেট পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১১ই অক্টোবর তারিখে। প্রায় ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী টেট পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপরে প্রায় এক বছর পরে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেধাতালিকা (Merit List) প্রকাশ করা হয়। ফের একবছর পরে ২০১৭ সালের ৪ই ডিসেম্বর দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় সংসদের তরফে এবং ৪২,০০০ জনকে প্রাইমারি শিক্ষক পদে নিযুক্ত করা হয়। চাকরিপ্রার্থীদের মতে, দ্বিতীয় প্যানেল তৈরীর উদ্দেশ্যই ছিল অসৎ। অযোগ্য প্রার্থীদের নাম মেধাতালিকার অন্তর্ভুক্ত করা। এই তালিকা থেকেই ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
সূত্রের খবর, এই ৪২,০০০ জনের মধ্যে প্রায় ১৭,০০০ শিক্ষকই বেনিয়মের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। তাই ২৬৯ জনের এই তালিকা তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র ; এর পেছনে বহু বাঘাযতীন লুকিয়ে রয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, ২৬৯ জন নয়, ২৭৩ জনকে অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রশ্নপত্রে ভুলের কারণে এই অতিরিক্ত নম্বরের দাবি জানিয়েছিলেন ২৭৮৭ জন! কিন্ত বেছে বেছে দুর্নীতিগ্রস্থ অসৎ প্রার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকে তো আবার সাদা খাতা জমা দিয়েও দিব্যি চাকরি পেয়ে গিয়েছে। কান পাতলেই শোনা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে ১০-১২ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে বহু মানুষ এই চাকরি পেয়েছেন। বিপুল পরিমান এই ঘুষের টাকার ভাগ গিয়েছে বিধায়ক-মন্ত্রীদের পকেটেও। তাই এইসব রাঘববোয়ালদের খুঁজে বের করাই এখন সিবিআইয়ের কাছে আসল চ্যালেঞ্জ।
এইরকম আরও নানান গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।